মানুষ নানা কারণে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে সাহায্য করা বা কোনো অনিয়ম উদঘাটনের মত মহৎ উদ্দেশ্য সেখানে থাকে না। আপনি যখন কোনো সোর্সের কাছে তথ্য চাইতে যাবেন, সেখানেও একই কথা প্রযোজ্য। ব্যক্তিগত ক্ষোভ, পরিস্থিতি বা বিশ্বাসের কারণে তাঁরা রং চড়িয়ে কথা বলতে পারেন, ফলে তাঁর দেয়া তথ্যে অতিরঞ্জন হতে পারে, কিংবা কোনো বিষয় তারা ইচ্ছা করেও চেপে যেতে পারেন। কোনো কোনো সোর্স হতে পারে অতি-উৎসাহী। (কি ঘটেছে তার বদলে) আপনি যা শুনতে পছন্দ করবেন, তারা সেটাই বলবেন। তাই সোর্সের অতীত সম্পর্কে একটু জেনে নিতে পারলে এমন অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে; কথা বলার সময় তারা কেমন আচরণ করছে, তা পর্যবেক্ষনও আপনাকে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করবে।
মানুষ কখনো কখনো অনিচ্ছাকৃত ভুল করে বসে, এবং ঘটনার বিস্তারিত ভুলে যায়। এই দুই কারণে সব তথ্য তৃতীয় একটি নিরপেক্ষ বা স্বাধীন সূত্র থেকে আপনার যাচাই করে নেওয়া উচিত। ভাষ্য হুবহু না মিললেও দুইটি ভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ একই দিকে নির্দেশ করার কথা। আপনি যদি দ্বিতীয় কোনো তথ্যদাতা খুঁজে না পান, অথবা যাচাই করার সময় হাতে না থাকে, তা-ও পাঠক-দর্শকদের জানানো উচিত। তাদের বলুন, কেন এই তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু মনে রাখুন: একটি প্রতিবেদনে অনেক বেশি অসমর্থিত তথ্য, দাবি আর অভিযোগ থাকলে তা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনার অবস্থানও দুর্বল করে দেয়।
তবে, ধরা যাক, আপনার দ্বিতীয় তথ্যদাতা সাংঘর্ষিক তথ্য দিয়েছেন, তাহলে? এ ক্ষেত্রে পাঠককে উভয় তথ্যদাতার তথ্য জানাতে হবে, প্রতিবেদনের মধ্যে ঊভয় ভাষ্যকেই জায়গা দিতে হবে । যেমন: ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সশস্ত্র ব্যক্তিরা সীমান্তে অনুপ্রবেশ করেছে; তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সীমান্ত অতিক্রমকারীদের নিরস্ত্র বলে বর্ণনা করেছে।’ আপনি যে খবর দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাতে খাপ খায় না এমন তথ্য আপনি স্রেফ এড়িয়ে যেতে পারেন না। এই দ্বন্দ্বগুলো আপনার প্রতিবেদনে প্রাসঙ্গিক হলে, তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। সিমুর হার্শের মতো সফল ও বিস্তৃত যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অধিকারী সাংবাদিকেরা কখনও কখনও একটি সূত্রের ভিত্তিতেও প্রতিবেদন করেছেন। তবে এমন সাংবাদিকের সংখ্যা খুবই কম।
আপনি যার সঙ্গেই কথা বলুন না কেন, একদম শুরুতেই তথ্যদাতা নিজের যে পরিচয় দি”্ছনে, তার যথার্থতা যাচাই করে নিন। নিজেদের কর্মস্থল, ঠিকানা, পরিবারের বিস্তারিত, সামরিকবাহিনীতে কাজ করে থাকলে তার রেকর্ড, পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স এগুলো কি তাঁরা দেখাতে পারবেন? কোনো তথ্যদাতার যদি অপরাধ, ব্যক্তিগত দুর্দশা, মানসিক অসুস্থতা, আর্থিক সমস্যা, সহিংসতা বা প্রতারণার অতীত ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই তাঁর দেওয়া তথ্যের বিষয়ে সন্দিহান হতে হবে। কোনো তথ্যদাতা যদি এসব বিষয়ে জানাতে বা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তাহলে তার পেছনে জোরালো কোনো কারণ থাকাই স্বাভাবিক এবং এ ক্ষেত্রে আপনাকে বিচার করতে হবে যে তাঁর দেওয়া তথ্য আপনি বিশ্বাস করবেন কি না।
আপনি কীসের সন্ধান করছেন সেটা যদি নিশ্চিত হতে পারেন, কেবলমাত্র তখনই আপনি কী পেলেন তার গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারবেন। তথ্যদাতা কি পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা অথবা এক গুচ্ছ প্রমাণ হাজির করেছেন? আপনি কি এগুলো বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে সম্ভাব্য অন্য সবরকম ভাবে সাজালে ভিন্ন উপসংহারে পৌঁছান? তাহলে, ‘ফাঁকটা’ কোথায়? তথ্যদাতার অভিজ্ঞতা কি তাঁর জনগোষ্ঠী বা সমাজের প্রতিনিধিত্বমূলক? এটি কি হালনাগাদ, অথবা ঘটনাটি কি অনেক আগে ঘটেছিল যে পরিস্থিতি এখন বদলে যেতে পারে এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ভুলভাবে স্মরণ করছেন?