অপরাধ ও অনাচার ফাঁস করা অনেক প্রতিবেদনেরই সূচনা হয় গোপন সোর্স বা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য থেকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পুলিশ বিভাগে আপনার একটি সূত্র গাড়ি চুরির চক্রের সঙ্গে একজন কমিশনারের জড়িত থাকার কথা জানেন। প্রতিহিংসা-পরায়ণ এক নারী পত্রিকা অফিসে ফোন করে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর আয়কর ফাঁকির তথ্য জানাতে পারেন। আবার, সরকারি চুক্তি পেতে একটি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি দরপত্র বোর্ডের একজন সদস্যের অন্যায় সম্পর্কের কথা বন্ধুর মতো সম্পাদককে কথাচ্ছলে জানাতে পারেন একজন রাজনীতিবিদ।
কিন্তু, এসব তথ্য যেমনটি ধারণা করা হয় তেমন নাও হতে পারে। এমনকি অসত্য বা কাউকে ফাঁসানোর জন্য সাজানোও হতে পারে। এগুলো আংশিক সত্য হতে পারে, যাতে করে অন্য কারো উদ্দেশ্য (এজেন্ডা) হাসিল হয়। এসব অভিযোগ সত্য হোক বা না হোক, এগুলো ব্যবহার করে আপনাকে দিয়ে একটা রিপোর্ট করানোর চেষ্টাও হতে পারে। এক্ষেত্রে, প্রথমেই যে কাজটি অবশ্যই করতে হবে তা হলো আপনাকে যে গোপন তথ্য দেওয়া হয়েছে সেটি সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য নিয়ে কাজ করার সময় প্রথমে যেসব প্রশ্ন করা উচিত :
- > গোপন সূত্র থেকে তথ্য না পেলেও কি আমি বিষয়টি নিয়ে লিখতাম?
- > বিষয়টা কি এমন যা সম্পর্কে আমার আগ্রহ রয়েছে?
- > যে সত্য প্রকাশিত হয়েছে তাতে সত্যিই কোনো জনস্বার্থ আছে?
এই তিনটি প্রশ্নের ক্ষেত্রেই আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।
দুর্নীতি: মুদ্রার দুই পিঠের মতো বিষয়
দরপত্র বোর্ডের সদস্যের দুর্নীতি কিম্বা প্রাক্তন স্বামী/স্ত্রীর কর ফাঁকির ঘটনাগুলোতে এসব প্রশ্নে আপনার উত্তর কী হবে? আরও একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির ঘটনা প্রকাশের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনস্বার্থের ওপর তেমন কোনো বড় প্রভাব নাও পড়তে পারে। যেসব দেশে দুর্নীতি ও কর ফাঁকি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পদ্ধতিগত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং কিছু সামাজিক গোষ্ঠীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সেখানে এধরণের তথ্য কোনো বড় প্রভাব ফেলার কথা নয়। সাংবাদিকরা প্রায়ই যুক্তি দেন যে এরকম দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলে অন্যরা ভয় পাবে এবং দূর্নীতিবিরোধী লড়াই কিছুটা এগুবে। এর কিছুটা সত্যতা আছে। দুর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির কারণে সম্ভাব্য কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি হয়তো নিবৃত্ত হবেন এবং অল্প কিছু অর্থও হয়তো রক্ষা পাবে। যেহেতু এসব অর্থ করদাতাদের, তাই সাধারণ মানুষের বিষয়টি জানারও অধিকার রয়েছে। কিন্তু, দেখা গেছে যে অগণিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশে পদ্ধতিগত দুর্নীতিতে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। কারণ, রাষ্ট্রের সব কাঠামো ও লেনদেন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ঢুকে গেছে। এমনকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানেও দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। ফলে মানুষ হয়তো এসব প্রতিবেদন দেখবে আর ভাববে, “এ আর নতুন কী? ”
কিন্তু, সাংবাদিকরা যদি এমন পদ্ধতিগত ত্রুটি তুলে ধরতে পারেন যার কারণে করফাঁকি ও ঘুষ গ্রহণ সহজ হয়ে গেছে, তাহলে প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তাতে হয়তো ঘটনার সাথে জড়িত পক্ষগুলোর জন্য নিজেদের লুকোনো আরো কঠিন হয়ে পড়বে।