১.২ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে যত ভুল ধারণা


এটি গ্ল্যামারাস।

সম্ভবত এ কারণেই ‘অল দ্য প্রেসিডেন্ট’স মেন’-এর প্রচ্ছদে ওয়াটারগেট কেলেংকারি উন্মোচন করা সাংবাদিকদের কোনো ছবি নেই। ছবি আছে তাদের চরিত্রে অভিনয় করা দুই তারকা রবার্ট রেডফোর্ড ও ডাস্টিন হফম্যানের। তাই ভ্রান্তি-বিলাসে থাকবেন না। বাস্তবতা বলছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কঠিন, নিরস এবং কখনো কখনো বিপদজনক।

সাংবাদিকেরা তাদের প্রতিবেদনের চেয়েও বড়।

অহংকার ভুলে যান। মনে রাখবেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মূলত জনসেবা। অনুসন্ধানী সাংবাদিক হয়েছেন বলে, পেশার নৈতিক মানকে অবজ্ঞা করার কোনো অধিকার আপনার নেই।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা নিঃসঙ্গ প্রহরীর মত।

সিনেমায় যেমন একজন নায়ক থাকে, মনে হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায়ও বুঝি একজনকে ঘিরেই যাবতীয় কাজ পরিচালিত হয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়; দলীয় প্রচেষ্টা ছাড়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঠিক টেকসই হয় না

বেসরকারি গণমাধ্যমই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে।

এটি আংশিক সত্য। কিন্তু, এমন অনেক উদাহরণ আছে, যেখানে সরকারি গণমাধ্যমই সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় অনুসন্ধান চালিয়েছে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৃষ্টি শুধু মন্দ খবরের দিকে।

অন্যায় খুঁজে বের করা এবং তা শোধরানোই কোনো জনগোষ্ঠী ও তার সেবক গণমাধ্যমের অগ্রাধিকার। কিন্তু, ইতিবাচক সংবাদকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভূমিকা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ: কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি নিবারণ করাটাও ভালো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিত্তি হতে পারে। বরং বিখ্যাত ব্যাক্তির ভাবমূর্তিতে ‘কালিমা লেপন’ বা চরিত্রহনন ঘরানার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় মানুষ অখুশি হয়। কারও জীবনে অন্যদের নাক গলাতে উৎসাহ দেওয়া ছাড়া কুৎসা রটনার আর কোনো অর্থই হয়তো নেই। সত্যিকারের অনুসন্ধানে উঠে আসা কেলেঙ্কারিকে অবশ্যই ব্যক্তিগত গন্ডি ছাপিয়ে বড় কোনো কিছুতে পৌঁছাতে হবে, যা কিনা জনস্বার্থের ওপর প্রভাব ফেলছে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মানে নেহাতই ভালো সাংবাদিকতা।

এই সংজ্ঞার মূলে রয়েছে সেই প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি, যা সাংবাদিক বলতেই বোঝে ‘সতর্ক প্রহরী’, যার কাজই হচ্ছে অন্যায় খুঁজে বের করা, দোষীদের চিহ্নিত করা, এবং এমনভাবে রিপোর্ট করা, যাতে পরিবর্তন ঘটে। এটি অবশ্যই তাদের দায়িত্বের একটি অংশ। দুর্নীতিবাজদের প্রতিহত করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন – শুধু অপরাধকেই শনাক্ত করে, এমন অপরাধের সুযোগ করে দেয় যে ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা, তাকে শনাক্ত করতে না পারে, তবে তা আদতে নতুন আরেকদল অপরাধীর জন্যে একই ধরনের অপরাধ করার পথ প্রশস্ত করে (এমনকি এই অপরাধ সংঘটনের উত্তম উপায়টিও হয়তো বাতলে দেয়)। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মূল সমস্যাকে শনাক্তের পাশাপাশি, সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতে হয়। যারা ক্ষমতাসীন, তারা ব্যর্থ হলে তারও কারণ অনুসন্ধান করে ফলোআপ প্রতিবেদন করতে হয়।