১.১ প্রতিবেদনের ধারণার জন্য পড়াশোনা


আপনি যদি সাংবাদিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে নিয়ে থাকেন, তাহলে পড়াশোনা করাটা শুধু ইচ্ছের বিষয় না, এটি একটি পেশাগত দায়িত্ব। এটি আপনার লেখার দক্ষতাই বাড়ায়। একই সঙ্গে আপনি নানা বই-প্রবন্ধ থেকে বুঝতে পারেন: কিভাবে নানা ব্যবস্থা-পদ্ধতি কাজ করছে। এটি বুঝতে না পারলে কোনটা খারাপ কাজ হচ্ছে, আর কোনটা ভালো কাজ হচ্ছে, তা ধরতে পারবেন না। আপনার কাছে স্বাভাবিকভাবে যেসব তথ্য আসছে সেগুলোর পিছনে বেশি সময় ব্যয় না করে বরং আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে নতুন নতুন তথ্য অনুসন্ধান করা উচিত।

ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারস অ্যান্ড এডিটরসের (আইআরই) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ব্র্যান্ট হিউস্টন আইআরই‘র ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারস হ্যান্ডবুকের পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের অনেক বীজ বহন করে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো। এসব পত্রিকায় প্রকাশিত নাম পরিবর্তন, ক্রয়-বিক্রয়, দরপত্রের মতো আইনি নোটিশে (বিজ্ঞাপন) লুকিয়ে থাকে ভালো সংবাদ কাহিনি। আপনার কাজ হলো সতর্ক থাকা ও কী-কেন হচ্ছে তা খুঁজে বের করা। সাংবাদিকেরা যে কাজটি খুব কমই করেন তা হলো প্রকাশিত খবরের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখা বা ফলো-আপ। পাঠক জরিপ ও ফোকাস গ্রুপ থেকে দেখা গেছে, পাঠকরা ফলোআপ নিউজ পড়তে বেশি পছন্দ করেন। তাঁরা জানতে চান ঘটনার পরবর্তীতে কী ঘটল। কেন এটা ঘটল। সংক্ষিপ্ত, সাদামাটা প্রতিদিনকার সংবাদের পেছনের ঘটনা কি সেটা জানতে চান পাঠকেরা। বিশেষভাবে সেসব সংবাদের দিকে নজর দিন যেখানে, ঘটনাটি কেন ঘটেছে, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বা কোনো ঘটনা শুধু একটি আঙ্গিক থেকে তুলে আনা হয়েছে। অবশ্যম্ভবী খবর কিম্বা নিয়মিত ঘটনা – যেমন বিভিন্ন বৈশ্বিক বা জাতীয় ঘটনার বার্ষিকীকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখারও চেষ্টা করা উচিত। অনেক পড়াশোনা করলে আপনি নীরবে আড়ালে চলে যাওয়া অনেক ঘটনার দিকেও নজর রাখতে পারবেন। যেমন, অনেক প্রশংসিত কোনো সরকারী নির্মান প্রকল্প।

সরকার ও এনজিওর প্রতিবেদনগুলো নিরস মনে হলেও সেগুলো আপনার পড়া উচিৎ। অপ্রতুল সম্পদ ও ভৌগোলিক কারণে বিদেশি অনেক প্রকাশনা ও ওয়েবসাইটে আপনার প্রবেশাধিকার সীমিত থাকতে পারে, তবুও অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের সম্ভাব্য সব পথ কাজে লাগানো উচিত যা তাকে হালনাগাদ থাকতে সাহায্য করবে। দূতাবাস ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন তথ্যকেন্দ্রে বিনা খরচে পড়ার কক্ষ ও গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ থাকে। সেখানে গিয়ে আপনি এগুলো দেখতে পারেন।

প্রাত্যহিক অনুসন্ধানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো: বিভিন্ন ক্ষেত্রের সূত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা, যেন অন্য রিপোর্টাররা খবর পাওয়ার আগেই সেটি আপনি জেনে যান। আর এজন্য কোনো কারণ ছাড়াই নিয়মিত যোগাযোগ দরকার হয়। যদি আপনি শুধু প্রয়োজনের সময়ই সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে সে মনে করতে পারে: আপনি তাকে ব্যবহার করছেন। এই ব্যাপারটিকে বলে সূত্রের সঙ্গে কাজ করা। কিন্তু এসব সূত্র থেকেও কোনো প্রতিবেদনের ধারণা এমনিতেই আপনার কাছে এসে পড়বে না। আপনাকে সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য সৃজনশীল ও কৌতুহলী হতে হবে।

আপনার যদি সব সময় ইন্টারনেট সুবিধা থাকে, তাহলে আপনি নিউজ সাইট, এবং ফেসবুক ও টুইটারের মত সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন। এখানে আপনি বিভিন্ন বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ভিন ভিন্নœ মতামত পাবেন। সেখান থেকে আপনি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেয়েও যেতে পারেন। টুইটার ফিডগুলো সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিষয়ের সর্বশেষ ও মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভান্ডার। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের পুনর্জাগরণ হয়েছে। এখান থেকেই পাওয়া যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের অনেক বড় বড় বিবৃতি। সেটি বাদ দিলেও, তাৎক্ষণিক নানা সংবাদ পাওয়ার ভালো উৎস হতে পারে এটি। গ্রামীন এলাকার সাংবাদিকদের জন্য অনেক উপকার হতে পারে, যদি তাঁরা বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবীদ ও অন্যান্য সাংবাদিকদের ফলো দিয়ে রাখেন।