৩. ‘স্পিন ডক্টর’-দের কিভাবে সামলাবেন?

৩. ‘স্পিন ডক্টর’-দের কিভাবে সামলাবেন?


জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাংবাদিকদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে এখন ক্রমবর্ধমানভাবে ‘স্পিন ডক্টর’রা (দাপ্তরিক মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তারা) ভূমিকা রাখছেন। মাঝেমধ্যে, তাঁরা এমনকি সাক্ষাৎকারেও বসে যান কিম্বা কোনবিষয়গুলো আলোচনায় তোলা যাবে না তার একটা আগাম তালিকা দিয়ে দেন ।

যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকার সাবেক রিপোর্টার ডেনিস বারকার একজন ব্রিটিশ সরকারি মুখপাত্রের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাছ থেকে ‘স্পিন ডক্টর’দের ভূমিকা সম্পর্কে নি¤œলিখিত ধারণা পেয়েছিলেন।

তাঁরা এমন কিছু অজুহাত দেবেন, যা হয়তো সত্য। কিন্তু সত্য হলেও সেগুলো নিতান্তই অজুহাত, এবং আপনি সেগুলো চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রাখেন। ‘আপনি যদি এটা না বলতে পারেন, তাহলে কে বলতে পারবেন’ – এটা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রায়ই, আপনি যে কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করছেন, তারা হয়তো আরেক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশের অধীনে কাজ করে। তাই তারা হয়তো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেবে না। অন্যভাবে বললে, তারা যখন মুখে কুলুপ আঁটবে, বা তথ্য না দেওয়ার চেষ্টা করবে, সেটা নেহায়েৎ তাদের চাকরির অংশ হিসেবেই করবে। এটা সেই মুখপাত্রের সমস্যা, আপনার নয়। বিশেষ কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া সরকার নিজেদের সমালোচনা হতে দেবে না। মুখপাত্রকে যদি নেতিবাচক বার্তাগুলোর পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক বার্তাও তুলে ধরারও সুযোগ দেন, তাহলে হয়তো তিনি কিছুটা মুখ খুলতে পারেন।

নাগরিক সমাজের সদস্যরা সেসব ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন, রিপোর্টাররা সেগুলো নিয়েই উদ্বিগ্ন থাকেন। এগুলো যদি সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে তা অবশ্যই ন্যয়সঙ্গত একটা উদ্বেগ। প্রশ্ন করুন: “আপনি কেন এগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন না?”, “সরকার কেন এগুলো নিয়ে আরও বেশি চিন্তিত নয়?” সরকার যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবে, রিপোর্টারের সেগুলো অগ্রাধিকার নাও হতে পারে। সরকারের হয়তো “বৃহত্তর উদ্বেগ” থাকতে পারে। সরকারের মুখপাত্ররা সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েন তখনই যখন সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে প্রশ্ন করা হয় যেগুলো এড়ানোকেই তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব মনে করেন।

ঠিকাঠাক জানাশোনা, অভিজ্ঞ ও ঠান্ডা মাথার সাংবাদিকের বদলে আগ্রাসী মনোভাবের নবীন সাংবাদিকদের কথা দিয়ে সন্তুষ্ট করা সহজ। মুখপাত্ররা সব সময়ই আশা করেন, সাধারণ কিছু তথ্যেই রিপোর্টাররা সন্তুষ্ট হবেন; বাড়তি আর কিছু চাইবেন না। যখন তাঁরা চিন্তা করবেন, ‘এর ভেতরে কোনো শিরোনাম নেই’, তখন আপনি দেখতে পাবেন, অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গেই তাঁরা তাঁদের আগ্রহের পারদটা নামিয়ে নিচ্ছেন। অন্যভাবে বললে, ‘স্পিন’ কৌশল হচ্ছে এমন: রিপোর্টাররা সংবেদনশীল কিছু হন্যে হয়ে খুঁজলে মুখপাত্ররা খবরটার গুরুত্ব কমিয়ে রিপোর্টারদের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। রিপোর্টাররা এর ভেতরে কোনটা নতুন তথ্য তা বের করে সংরক্ষণ করলে ভালো একটা স্টোরি হলেও হতে পারে। এমনকি, সে সময়ে তা বিরক্তিকর মনে হলেও পরে কাজে আসতে পারে।

আপনার তথ্য সঠিক নয় বলা হলেই সেটাকেই সত্য বলে ধারণা করা উচিত হবে না। বরং, ‘আমি ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু…’ বলে আপনি আপনার গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ফলো-আপ প্রশ্ন করুন। আপনার প্রশ্ন ফিরিয়ে দিলে ঘুরিয়ে আবার করুন। কিছু ‘স্পিন ডক্টর’ পাল্টা প্রশ্ন করে আপনার প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন: ‘মন্ত্রী বিবাহিত। এরপরও কীভাবে তিনি এমন একটা প্রণয়ে জড়িয়ে পড়বেন? আপনারা সাংবাদিকেরা কেন এই ইস্যুতে আটকে থাকছেন?’ তখন আপনার উচিত হবে বলা, ‘জনাব মুখপাত্র, আপনি অবশ্যই জানেন যে, একজন সাংবাদিকের ভাবনার বিষয়ে কেউ আগ্রহী নয়। পাঠকদের আগ্রহের কারণেই আমি এখানে এসেছি। মন্ত্রীর বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে আমাদের কাছে প্রচুর চিঠি এসেছে। সুতরাং…?’

আপনি যদি মনে করেন, উত্তরটা আসেনি। আবার প্রশ্ন করুন: “আমি এই উত্তর পুরোপুরি বুঝতে পারি নি। আপনি কি আবার বিষয়টি একটু বলবেন?” অথবা “আমি নিশ্চত নই যে আপনি আমার প্রশ্নটার উত্তর পুরোপুরি দিয়েছেন।” উত্তরটা যে সঠিকভাবে আসেনি, তা বোঝানোর ভদ্রোচিত উপায় এটা। “আপনি কী এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চান না?”, “উত্তর দিতে আপনার বাঁধা কোথায়?”, “আপনি যদি আমাকে বলেন, তাহলে কী ঘটতে পারে?”, “কে আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?”

কঠিনতম প্রশ্নগুলোর দিকে যাওয়ার জন্য নানামুখী উপায় ভাবুন: মাঝেমধ্যে জটিল তথ্য জানতে চাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, সোজাসুজি প্রশ্ন করে ফেলা। কিন্তু যদি আপনি দক্ষ একজন মুখপাত্রের সামনাসামনি হন, তাহলে দেখতে পাবেন, অধিকতর সুক্ষ্ম পন্থাগুলো কখনো কখনো কাজে দেবে। যেসব ক্ষেত্রে সরাসরি প্রশ্ন করলে প্রত্যাখাত হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেসব ক্ষেত্রে এটা ভালো কাজে দেয়। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো। তাঁদের কিছুটা সাবধান করে দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার একটা সুযোগ করে দিন: “সম্ভবত এই প্রতিবেদনগুলো আপনি পড়েছেন, যেখানে এই ইঙ্গিত আছে… তাই নয় কী?”, “আমি জানি যে, এটা একটা অস্বস্তিকর ইস্যু, কিন্তু আমাদের পাঠকেরা চান, আমি বিষয়টি তুলি…”, “সঠিক তথ্য রেকর্ড করতে আমাকে সাহায্য করুন…”, “পার্লামেন্টে বিরোধী দল বলেছে, আপনি… ”, “আপনি কী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান?”