২. অনুসন্ধান একা করবেন নাকি দল গড়বেন?

২. অনুসন্ধান একা করবেন নাকি দল গড়বেন?


একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন একা একাই করে ফেলার অনেক কারণ পাওয়া যাবে:

  • > প্রতিবেদনের পরিসর আপনি একাই সামাল দেয়ার মত
  • > আপনার কাছে প্রায় সব রিসোর্স বা যোগাযোগ আছে
  • > সহকর্মীদের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত নন।

তবে কোনো কোনো অনুসন্ধান প্রায়ই এমন অবস্থায় চলে যায় যেটি একজনের পক্ষে করে ফেলা কঠিন হয়ে ওঠে। আরো অনেকে তখন সেখানে হাত লাগালে কাজটির ব্যবস্থাপনা ঠিকঠাকভাবে করা যায়। একই সঙ্গে একটি প্রতিবেদনের পেছনে অনেকের দৃষ্টি থাকলে নতুন নতুন অনেক আঙ্গিকও বেরিয়ে আসে

আপনি যদি একটা দল হিসেবে কোনো বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে আরও কিছু পদক্ষেপ প্রয়োজন হবে এবং সেজন্য পরিকল্পনা করতে হবে। সবার আগে এবং সবচেয়ে জরুরী সিদ্ধান্ত হলো, প্রকল্প ব্যবস্থাপক কে হবেন। তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তিনি দলের সব সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সমন্ব^য় করবেন। দ্বিতীয় ধাপ হলো, একটি কর্মশালা আয়োজন করা, যেখানে অনুসন্ধানের বিষয়ে সদস্যরা তাঁদের চিন্তাগুলো তুলে ধরতে পারেন এবং একটা স্পষ্ট করণীয় তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়।
আপনাকে এ বিষয়ে একটি কাঠামো ঠিক করে নিতে হবে:

  • ? দলের সদস্যরা কখন-কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?
  • ? সম্পাদনার প্রক্রিয়া কেমন হবে?
  • ? অনুসন্ধানের সময় বাধা এলে কিভাবে সামলানো হবে?
  • ? চূড়ান্ত স্টোরির ক্ষেত্রে কীভাবে দলের সবাই একমত হবেন?
  • ? কোর ধরনের খরচ বহন করা হবে?
  • ? অনুসন্ধানের প্রয়োজনে আড়িপাতা, ছদ্মবেশ ধারণ করা কিংবা কোনো নথি পেতে কাউকে টাকা দেওয়া যাবে কিনা?

এ ছাড়া, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দলের কোন সদস্যের কী ভূমিকা হবে তা সুস্পষ্ট করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়ানো যায়। দলের কোনো সদস্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকলে, তিনি বা তাঁরা অনুসন্ধানের বিষয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবেন। সংশ্লিষ্ট মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এবং অনুসন্ধান প্রকল্পের ব্যবস্থাপকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকার বিষয়টি সুষ্পষ্ট করতে হবে। কখনো কখনো চুক্তিপত্র সইয়ের মাধ্যমে সেটি করতে হবে।

দলীয় সদস্যদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুর সাথে পরিচিত হতে হবে: দলের সদস্যরা কি অনুসন্ধানের আগাগোড়া সব কিছু জানেন? সাধারণ নাগরিক হিসেবে দলের সদস্যরা কেন এই বিষয় নিয়ে আগ্রহী হবেন? অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উত্তম-চর্চা ও মূল্যবোধও আলোচনার অংশ হওয়া উচিত।

প্রকল্প ব্যবস্থাপকই কার্যত অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দেন। তাঁকেই পুরো দলের লক্ষ্য ক্রমাগত সামনে নিয়ে আসতে হয় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হয়। প্রকল্প ব্যবস্থাপককে এও নিশ্চিত করতে হয় যে, শেষপর্যন্ত তাদের প্রতিবেদনটি স্থানীয় কোনো ইস্যুতে জনগণের বোঝাপড়া তৈরিতে সাহায্য করবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি এবং অনুসন্ধানী দলের সদস্যদের মধ্যে সংযোগ-সেতু হিসেবে কাজ করেন।


টিম-এ
স্পটলাইট
টিম-বি
পানামা পেপারস
আঞ্চলিক এবং একটি নিউজরুম টিমের অনুসন্ধানের একটি বড় উদাহরণ ‘স্পটলাইট টিম’।
২০০২ সালে বোস্টন গ্লোব পত্রিকার সাংবাদিকেরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানতে পারেন বোস্টন ক্যাথলিক গীর্জার কিছু কার্ডিনাল ও বিশপ সেখানকার যাজকদের হাতে শিশুদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা গোপন করেছেন। বোস্টন গ্লোবের সেই প্রতিবেদনের পর মার্কিন অন্যান্য মিডিয়া সেদিকে নজর দেয় এবং অন্যান্য অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এই অনুসন্ধান নিয়ে সিনেমা নির্মিত হয় এবং ২০১৫ সালে ‘স্পটলাইট টিম’ নামে তা মুক্তি পায়।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পারস্পরিক সহযোগিতার আন্তর্জাতিক ও চমৎকার এক উদাহরণ হলো ‘পানামা পেপারস’।
প্রায় এক বছর ধরে ৭০টিরও বেশি দেশের চার শতাধিক সাংবাদিক একটি টিম হিসেবে পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। এতে অনেক রাজনীতিবিদ, খেলোয়াড়, অপরাধী এবং আরও অনেকের নাম বেরিয়ে আসে যারা বেআইনিভাবে পানামায় অফশোর অ্যাকাউন্ট করছেন। এক কোটি দশ লাখেরও বেশি নথি বিশ্লেষণ করা হয়; যা কখনো এককভাবে একজন সাংবাদিকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই উদাহরণে বোঝা যায়, অনুসন্ধানের জন্য একটা দল আকারে কত বড় হবে, তা তথ্যের পরিমাণ এবং কোন সাংবাদিকেরা জড়িত হচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে।
বিশাল সেই অনুসন্ধান শেষে বিশ্বের অন্যতম একটা বৃহৎ অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনা হিসেবে ২০১৬ সালে একযোগে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত হয়।