২.২ পেপার ট্রেইল


নথি অনুসরণ বা পেপার ট্রেইল থেকেও আপনার তথ্যভান্ডারে আরও তথ্য যোগ হতে পারে। হাইপোথিসিস সমর্থনের জন্য কী ধরনের নথিপত্র লাগবে এবং সেগুলো কিভাবে পাওয়া যাবে, তা নির্ধারণের জন্য একটি কৌশল তৈরি করতে হবে আপনাকে। এই প্রক্রিয়ায় আপনি একটি নথি দিয়ে শুরু করে, সেখান থেকে পরবর্তী প্রাসঙ্গিক নথির খোঁজ পাবেন। এরপর নথিগুলো বিশ্লেষণ করে আপনার পাওয়া তথ্যের সঙ্গে তার যোগসূত্র মেলাতে হবে।

এসব প্রাথমিক নথিতে যা আপনার কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয় সবকিছু চিহ্নিত করুন। উদাহরণত: এতে এমন কোনো ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত থাকতে পারে, যিনি গৃহযুদ্ধ কবলিত একটি এলাকায় কোনো খনিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন (সংঘাত অর্থায়নে হীরার অবৈধ বাণিজ্যের জন্য যে এলাকাটি পরিচিত)। জীবনবৃত্তান্তে ওই ব্যক্তির চাকরিজীবনের ফাঁক-ফোকরগুলোর কথা নাও থাকতে পারে। এখানেই মৌলিক গাণিতিক দক্ষতার বিষয়টি আসে। তাঁর কর্মজীবনে বিভিন্ন জায়গায় কাজের সময়গুলো যোগ করলেই তার কর্মজীবনের পুরো সময়ের হিসাবে কোনো ফাঁক রয়েছে কি না, কোনো একটা সময়ের চাকরির কোনো রেকর্ড না থাকলে তা ধরা পড়বে। আপনি যদি কোনো কাজ বা প্রতিষ্ঠানের রেকর্ড যাচাই করেন, তাহলে জানতে পারবেন, কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করেই চাকরি ছেড়ে গিয়েছিলেন কি না। এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তির কর্মস্থলের ইতিহাস জানতে আরও নথি সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। আপনি হয়তো জানতে পারবেন যে মানবসম্পদ বিভাগে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরি বা প্রতারণার অভিযোগ নথিবদ্ধ হয়েছিল। এরপর ওই ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল কি না, তাঁকে আদালতে তোলা হয়েছিল কি না কিংবা কারাদন্ড হয়েছিল কি না সেই সব নথিরও প্রয়োজন পড়তে পারে। অন্য কথায়, এক নথি থেকে আপনার অন্য নথির প্রয়োজন পড়তে পারে এবং এর মাধ্যমে প্রমাণযোগ্য সাক্ষ্য পাওয়া যাবে।

প্রাসঙ্গিক এবং অপ্রাসঙ্গিক নথিগুলো আলাদা করে ফেলার পর নিজেকে অনুসন্ধানের কেন্দ্রীয় চরিত্রের জায়গায় বসান। চিন্তা করুন, তাঁর পক্ষে কী কী করা সম্ভব ছিল? তিনি একটির বদলে অন্য পথটি বেছে নিলে ভিন্ন কিছু হতো কি? এভাবে ভাবলে অন্ধকারে পথ হাতড়ানো থেকে রক্ষা পাবেন। তথ্যের জন্য লাইব্রেরি বা আর্কাইভের ওপর নির্ভর করা একটি দীর্ঘ, ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া। এ বিষয়টি ছোট করে দেখবেন না। আপনার কাক্সিক্ষত তথ্য যদি ডিজিটাল ভার্সনে থাকে, তাহলে সেটির জন্য সার্চ করলে প্রাসঙ্গিক ফলাফল যেমন আসবে, একই পরিমাণ অপ্রাসঙ্গিক ফলাফলও আসবে। আর আপনি যদি এমন দেশে থাকেন, যেখানে উন্মুক্ত নথিগুলো প্রধানত কাগজপত্রে আছে; তাহলে আপনাকে হয়তো লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়কদের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে এগুলো দেখার জন্য; এবং খুঁজে বের করতে হবে: কিভাবে নথিপত্রগুলো সাজানো আছে।

প্রায় ক্ষেত্রেই জন্মসনদ কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো সরকারি নথির খোঁজ করাই কাজ শুরুর সেরা উপায় বলে দেখা যায়। তবে এগুলো পেতে বেশ সময় লাগে এবং সেটি খুব বেশি কাজেও আসে না; বিশেষ করে যদি তথ্যটি অনলাইনেই পাওয়া যায়। স্থানীয় পত্রিকাগুলোর অনলাইন আর্কাইভে সার্চ করে দেখুন, কোনো ব্যক্তির ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া বা তার কর্মস্থলের ওয়েবসাইটে খোঁজ করুন। দেখুন এসব জায়গা থেকে কী তথ্য পাওয়া যায়। আপনার কাছে যদি সেই ব্যক্তির সত্যিকার পুরো নাম থাকে, তাহলে হয়তো আপনি আদালতের মামলার মতো নথিপত্রেও তার নাম পেয়ে যেতে পারেন। তিনি কোন বিশ^বিদ্যালয়ে গিয়েছেন এবং কোথায় কোথায় তার সংযোগ আছে ইত্যাদি বিষয়েও আপনি নানা তথ্য পেয়ে যেতে পারেন। সংবাদে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও আপনি বিপুল পরিমাণ তথ্য পেয়ে যেতে পারেন, যা আপনাকে নথিপত্রের সন্ধানে তাড়িত করবে। যেমন স্থানীয় কোনো ভবনের বিস্তারিত তথ্য (ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি কার্যালয়ের), আইনি কোনো নোটিশ (যেমন দানপত্র, নাম পরিবর্তন, বিয়ে, অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া, বন্ধকী সম্পত্তির দখল, নিলাম, টেন্ডার, জব্দ/ পরিত্যক্ত সম্পত্তি ইত্যাদি) এবং গ্রেপ্তার ও আদালতের রায়। প্রতিটি তথ্যই আপনি যে ধাঁধাঁর সমাধান খুঁজছেন, তার ছোট ছোট জবাব হাজির করতে পারে।

সারকথা হলো, আপনি নথির সন্ধান করবেন এভাবে:

  • >   ইন্টারনেটে সার্চ, আর্কাইভে অনুসন্ধান এবং তথ্য দিতে পারেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত ছুটুন, যতক্ষণ না অনুসন্ধানের কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে পর্যাপ্ত নথি পাওয়া যায়।
  • >   ডেটা ম্যাপিং কৌশল ব্যবহার করে তথ্যগুলোকে এমনভাবে সাজান, যাতে তথ্য বিশ্লেষণ করে ফাঁক-ফোকর, বৈপরীত্য ও অসঙ্গতিগুলো বের করা যায়।
  • >   কোন কোন নথি পেলে এসব ফাঁকের জবাব পাওয়া যাবে বা বৈপরীত্যগুলোর ব্যাখ্যা মিলবে, সেগুলোর ব্যাপারে চিন্তা এবং সে অনুযায়ী অনুসন্ধান শুরু করুন।